শঙ্খ আলু
স্থানীয় নাম : সোরা জৈন্তাআলু (বাঙলা), শঙ্খ মেটেআলু (বাঙলা), সোরাআলু (বাঙলা), হোয়াই (খুমি), উরিংকাংহক (চাকমা), জংলি মাতল (অসমীয়)
বৈজ্ঞানিক নাম : Dioscorea glabra Roxb.
সমনাম : Dioscorea glabra var. longifolia Prain & Burkill; Dioscorea glabra var. vera Prain & Burkill; Dioscorea hongkongense Uline ex R. Knuth; Dioscorea hongkongensis Uline ex R.Knuth; Dioscorea nummularia Roxb.; Dioscorea oryzetorum var. latifolia Prain & Burkill; Dioscorea oryzetorum var. mediifolia Prain & Burkill; Dioscorea siamensis R.Knuth
শঙ্খ মেটেআলু একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এরা পুরোপুরি ডানপন্থী, অর্থাৎ গাছ বা অন্য কোনো অবলম্বনের ডানদিকে পেঁচিয়ে বেয়ে ওঠে। উদ্ভিদের কাণ্ডে কোনো রোম নেই তবে মূল ও মূলের কাছাকাছি কাণ্ডে রোম বা কোমল কাঁটা আছে। উপরের দিকের পাতা দীর্ঘায়ত বা উপবৃত্তাকার এবং তীক্ষ্ণাগ্র। মূলের দিকের পাতা তাম্বুলাকার বা পান পাতার মতো। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুল ফোটে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফল হয়। ফল ত্রিকোণাকৃতির ডানাবিশিষ্ট। স্ফীত কন্দের আকার মাত্র দেড় থেকে দুই কেজি যা খামালু, মেটে আলু (Dioscorea esculenta (Lour.) Burkill) বা দেশি মেটে আলুর (Dioscorea decipiens Hook.f.) চেয়ে বেশ ছোট এবং লম্বাটে।
বৈজ্ঞানিক নাম : প্রথম শতাব্দির গ্রীক চিকিৎসক ও ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক বইয়ের লেখক পোডানিয়স ডায়াস্কোরাইডস্ (Pedanius Dioscorides)-এর স্মৃতি রক্ষার্থে দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস Dioscorea গণের নাম রাখেন। এ গণের উদ্ভিদ থেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপাদান ডায়াজোনিন পাওয়া যায়। স্কটল্যান্ডের উদ্ভিদবিদ ও শল্য চিকিৎসক উইলিয়াম রক্সবার্গ Dioscorea glabra প্রজাতিটি শনাক্ত করেন। তিনি ১৭৯৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত হাওড়ার রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। এ সময় তিনি Hortus Bengalensis বইটি প্রকাশ করেন। ল্যাটিন শব্দ Glabra (glaber, glabrum)-এর অর্থ রোমহীন বা মসৃণ। Dioscorea গণের অন্যান্য প্রজাতির মতো গায়ে রোম বা কাঁটা হয় না বলে এই প্রজাতির এমন নামকরণ করা হয়েছে।
বাঙলা নাম : Dioscorea glabra বাঙলায় সোরা আলু বা সোরা জৈন্তা আলু নামে পরিচিত। বাঙলা নামে শৃঙ্খলা রাখার জন্য আমরা শঙ্খ আলু বা সোরা জৈন্তাআলু নাম ব্যবহারের পক্ষে। কোথাও কোথাও একে সোরাআলুও বলা হয় যদিও Dioscorea belophylla (Prain) Voigt ex Haines (1910) উদ্ভিদটিই সোরাআলু নামে অধিক পরিচিত। এছাড়া Dioscorea wallichii Hook.f. (1892) উদ্ভিদটিকে জৈন্তাআলু বলা হয়।
বিস্তৃতি : উদ্ভিদটি বাংলাদেশ, বার্মা (মায়ানমার), চীন, কম্বোডিয়া, ভারত, লাওস, মালয়শিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেটে জন্মায়। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলের ঝোপ এবং লম্বা গাছের আশেপাশেই সোরা জৈন্তাআলু ভালো জন্মায়। তবে পানি জমে থাকে এমন জায়গায় বা জলাশয়ের কাছে এ উদ্ভিদ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
খাদ্যে ব্যবহার : মূলধারার বাঙালিদের কাছে এ উদ্ভিদটি এত অপরিচিত যে চাষ হয় না বললেই চলে। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ উদ্ভিদ চাষ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী এ আলু খাদ্য হিশেবে গ্রহণ করে বিধায় বসতভিটার আশেপাশে সংরক্ষণের প্রবণতা আছে। এ আলু খাদ্য হিশেবেও মন্দ হয় না কারণ এটি যথেষ্ট পুষ্টিগুণসম্পন্ন ৭৭.৮ - ৭৮.২৫ শতাংশ শ্বেতসার আছে।
চিকিৎসায় ব্যবহার : সোরা জৈন্তাআলুর স্ফীতকন্দ দেখতে শঙ্খের মতো বিধায় একে আয়ুর্বেদে শঙ্খ আলুকা বলা হয়। আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসারে সোরা জৈন্তাআলু পাতার নির্যাস জন্ম নিয়ন্ত্রক হিশেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া প্রসবোত্তর মাসিকের ব্যথা লাঘবে আলুর ফল পুড়িয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে। এ লতার কাণ্ড থেঁতলে আঘাতের স্থানে লাগালে ব্যথা প্রশমন হয়।
সংরক্ষণ : আইইউসিএন-এর তালিকা অনুসারে এ উদ্ভিদটি আশঙ্কামুক্ত। এখন পর্যন্ত কোনো সংরক্ষণ উদ্যোগ পাওয়া যায়নি।
সমনাম : Dioscorea glabra var. longifolia Prain & Burkill; Dioscorea glabra var. vera Prain & Burkill; Dioscorea hongkongense Uline ex R. Knuth; Dioscorea hongkongensis Uline ex R.Knuth; Dioscorea nummularia Roxb.; Dioscorea oryzetorum var. latifolia Prain & Burkill; Dioscorea oryzetorum var. mediifolia Prain & Burkill; Dioscorea siamensis R.Knuth
শঙ্খ মেটেআলু একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এরা পুরোপুরি ডানপন্থী, অর্থাৎ গাছ বা অন্য কোনো অবলম্বনের ডানদিকে পেঁচিয়ে বেয়ে ওঠে। উদ্ভিদের কাণ্ডে কোনো রোম নেই তবে মূল ও মূলের কাছাকাছি কাণ্ডে রোম বা কোমল কাঁটা আছে। উপরের দিকের পাতা দীর্ঘায়ত বা উপবৃত্তাকার এবং তীক্ষ্ণাগ্র। মূলের দিকের পাতা তাম্বুলাকার বা পান পাতার মতো। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুল ফোটে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফল হয়। ফল ত্রিকোণাকৃতির ডানাবিশিষ্ট। স্ফীত কন্দের আকার মাত্র দেড় থেকে দুই কেজি যা খামালু, মেটে আলু (Dioscorea esculenta (Lour.) Burkill) বা দেশি মেটে আলুর (Dioscorea decipiens Hook.f.) চেয়ে বেশ ছোট এবং লম্বাটে।
বৈজ্ঞানিক নাম : প্রথম শতাব্দির গ্রীক চিকিৎসক ও ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক বইয়ের লেখক পোডানিয়স ডায়াস্কোরাইডস্ (Pedanius Dioscorides)-এর স্মৃতি রক্ষার্থে দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস Dioscorea গণের নাম রাখেন। এ গণের উদ্ভিদ থেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপাদান ডায়াজোনিন পাওয়া যায়। স্কটল্যান্ডের উদ্ভিদবিদ ও শল্য চিকিৎসক উইলিয়াম রক্সবার্গ Dioscorea glabra প্রজাতিটি শনাক্ত করেন। তিনি ১৭৯৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত হাওড়ার রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। এ সময় তিনি Hortus Bengalensis বইটি প্রকাশ করেন। ল্যাটিন শব্দ Glabra (glaber, glabrum)-এর অর্থ রোমহীন বা মসৃণ। Dioscorea গণের অন্যান্য প্রজাতির মতো গায়ে রোম বা কাঁটা হয় না বলে এই প্রজাতির এমন নামকরণ করা হয়েছে।
বাঙলা নাম : Dioscorea glabra বাঙলায় সোরা আলু বা সোরা জৈন্তা আলু নামে পরিচিত। বাঙলা নামে শৃঙ্খলা রাখার জন্য আমরা শঙ্খ আলু বা সোরা জৈন্তাআলু নাম ব্যবহারের পক্ষে। কোথাও কোথাও একে সোরাআলুও বলা হয় যদিও Dioscorea belophylla (Prain) Voigt ex Haines (1910) উদ্ভিদটিই সোরাআলু নামে অধিক পরিচিত। এছাড়া Dioscorea wallichii Hook.f. (1892) উদ্ভিদটিকে জৈন্তাআলু বলা হয়।
বিস্তৃতি : উদ্ভিদটি বাংলাদেশ, বার্মা (মায়ানমার), চীন, কম্বোডিয়া, ভারত, লাওস, মালয়শিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেটে জন্মায়। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলের ঝোপ এবং লম্বা গাছের আশেপাশেই সোরা জৈন্তাআলু ভালো জন্মায়। তবে পানি জমে থাকে এমন জায়গায় বা জলাশয়ের কাছে এ উদ্ভিদ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
খাদ্যে ব্যবহার : মূলধারার বাঙালিদের কাছে এ উদ্ভিদটি এত অপরিচিত যে চাষ হয় না বললেই চলে। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ উদ্ভিদ চাষ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী এ আলু খাদ্য হিশেবে গ্রহণ করে বিধায় বসতভিটার আশেপাশে সংরক্ষণের প্রবণতা আছে। এ আলু খাদ্য হিশেবেও মন্দ হয় না কারণ এটি যথেষ্ট পুষ্টিগুণসম্পন্ন ৭৭.৮ - ৭৮.২৫ শতাংশ শ্বেতসার আছে।
চিকিৎসায় ব্যবহার : সোরা জৈন্তাআলুর স্ফীতকন্দ দেখতে শঙ্খের মতো বিধায় একে আয়ুর্বেদে শঙ্খ আলুকা বলা হয়। আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসারে সোরা জৈন্তাআলু পাতার নির্যাস জন্ম নিয়ন্ত্রক হিশেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া প্রসবোত্তর মাসিকের ব্যথা লাঘবে আলুর ফল পুড়িয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে। এ লতার কাণ্ড থেঁতলে আঘাতের স্থানে লাগালে ব্যথা প্রশমন হয়।
সংরক্ষণ : আইইউসিএন-এর তালিকা অনুসারে এ উদ্ভিদটি আশঙ্কামুক্ত। এখন পর্যন্ত কোনো সংরক্ষণ উদ্যোগ পাওয়া যায়নি।