কেশরদাম
বৈজ্ঞানিক নাম : Ludwigia adscendens (L.) H.Hara
সমনাম : Jussiaea adscendens L.; Jussiaea repens L.
বাংলা নাম : কেশরদাম, ক্যাসলা, মালচা, মুলসি
ইংরেজি নাম : Water Primrose, Water Dragon, Marshy Jasmine
অন্যান্য নাম : পানি খুটোরা (আসাম); নীরুহাভু (কানাড়া); নীরুদন্তু (কানাড়া); কেসর (হিন্দি); নীর চরম্বু (মালয়ালাম); ইসিং কুন্দো (মণিপুরী); জাডেলো (নেপালি); নীরু বাছালি (তেলেগু); নীরু থিগালু (তেলেগু); লুডভিগিয়া গ্রান্ডেস (ফরাসি)
উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus) ১৭৬৭ সালে তাঁর Mantissa Plantarum গ্রন্থে উদ্ভিদটিকে Jussiaea adscendens নামে শনাক্ত করেন। ফরাসি প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিদ বার্নার্ড ডি জাসিইউ (Bernard de Jussieu)-এর প্রতি সম্মান জানিয়ে গণটির নাম জাসিইয়া করা হয়।
বার্নার্ড জাসিইউ ১৬৯৯ সালের ১৭ আগস্ট পূর্ব ফ্রান্সের লিয়ন শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপিলার থেকে চিকিৎসাবিদ্যা পড়া শেষ করে ১৭২০ সালে চিকিৎসক পেশায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর ভাই অ্যান্টনি ডি জাসিইউ (Antoine de Jussieu) ছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও প্যারিস উদ্ভিদ উদ্যানের কর্মকর্তা। পেশা জমজমাট না হওয়ায় ভাইয়ের আমন্ত্রণে বার্নার্ড ১৭২২ সালে প্যারিসে যান এবং উদ্ভিদবিদ সেবাস্টিন ভ্যাইল্যান্টের (Sébastien Vaillant)-এর উত্তরসূরি হিশেবে প্যারিস উদ্ভিদ-উদ্যানের প্রদর্শক পদে যোগদান করেন।
উদ্ভিদ-উদ্যানের চাকরিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফরাসি উদ্ভিদবিদ জোসেফ পিটন লিখিত (Joseph Pitton de Tournefort) প্যারিস অঞ্চলের উদ্ভিদের ইতিহাস (Histoire des plantes qui naissent aux environs de Paris) অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি উদ্ভিদ সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তী কয়েক বছরে ফ্রেন্স অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে উদ্ভিদ বিষয়ক একাধিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। উদ্ভিদের বিবর্তন বিষয়ে নিজ তত্ত্ব প্রমাণ করার জন্য তিনি তিনবার নর্ম্যান্ডি উপকূলে অভিযান চালান। এছাড়া বড়ো ভাই অ্যান্টনিকে সঙ্গে নিয়ে স্পেন, পর্তুগাল ও দক্ষিণ ফ্রান্সে গবেষণা করেন।
বার্নার্ড তাঁর আবিস্কারের স্বীকৃতির বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দিতেন না। তাই তাঁর তত্ত্বগুলোর প্রয়োগ দেখা যায় ভ্রাতুস্পুত্র অ্যান্টনি লরেন্ট ডি জাসিইউ (Antoine Laurent de Jussieu)-এর Genera plantarum বইতে। বার্নার্ড ডি জাসিইউ ১৭৭৭ সালে প্যারিসে মারা যান। তাঁর নামকরণকৃত উদ্ভিদের নামের শেষে B.Juss. যুক্ত করা হয়।
কার্ল লিনিয়াসের নামকরণ অনুসরণ করে জাপানি উদ্ভিদবিদ হিরোশি হারা (Hiroshi Hara) ১৯৫৩ সালে তাঁর Ludwigia Versus Jussiaea গ্রন্থে Jussiaea গণের ২৯টি প্রজাতি Ludwigia গণের আওতাভূক্ত করেন। হিরোশি হারা ১৯১১ সালের ৫ জানুয়ারি জাপানের টোকিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেন। হিরোশি ১৯৮৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর টোকিওতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদের নামের শেষে H.Hara লেখা হয়।
পরিবর্তিত গণ লুডভিগিয়া নামটিও কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক প্রদত্ত।
পরিবর্তিত গণ লুডভিগিয়া নামটিও কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক প্রদত্ত।
লিনিয়াসের কাছ থেকে হিরোশি হারা প্রজাতির নাম adscendens গ্রহণ করেন। adscendens শব্দটির অর্থ শায়িত অবস্থা থেকে উপরের দিকে উত্থান। যে লতা, বীরুৎ বা গুল্ম প্রধানত ভূশায়ী অবস্থায় থাকে এবং অগ্রভাগ উপরের দিকে বেয়ে উঠতে চায় সেগুলোকে adscendens বলা হয়। জলের উপর কেশরদামের ডগা উর্ধ্বমূখী হয়ে থাকে বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে।