Nymphoides (Ség.)

Nymphoides গণটি Menyanthaceae বা চাঁদমালা গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ, অক্ষরবিদ, জ্যোতির্বিদ ও উদ্ভিদবিদ জ্যঁ ফ্রাঙ্কো সেগুয়ের (Jean-François Séguier) ১৭৫৪ সালে Nymphoides গণের নামকরণ করেন। Menyanthaceae গোত্রের ৮টি গণ থাকলেও শুধুমাত্র Nymphoides গণের উদ্ভিদ বাঙলাদেশে পাওয়া যায়। 
জ্যঁ ফ্রাঙ্কো সেগুয়ের ১৭০৩ সালের ২৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ এবং ১৭৮৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপেলার শহরে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার সময়ই তিনি উদ্ভিদবিদ্যার প্রেমে পড়ে যান। বন্ধু, ইতালীয় লেখক ও নাট্যকার এবং সহকর্মী স্কিপিও মাফেই ও সেগুয়ের ১৭৩২ থেকে ১৭৩৬ পর্যন্ত চার বছর ধরে পুরো ইউরোপের এমাথা ওমাথা চষে বেড়ান শুধু উদ্ভিদ বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। ১৭৫৫ সালে তিনি আকাদেমি দ্য নিমে (Académie de Nîmes)-এর সদস্য মনোনীত হন এবং ১৭৬৫-১৭৮৪ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৭২ সালে তিনি ফরাসি মানবিক বিজ্ঞান একাডেমি’র (Académie des Inscriptions et Belles-Lettres) সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭৪৫-৫৪ সাল পর্যন্ত নয় বছর ধরে তিনি তিন খণ্ডের Plantae Veronenses নামে ইতালির ভেরোনা অঞ্চলের উদ্ভিদের পরিচিতি বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া ১৭৪০ সালে Bibliotheca botanica নামে ইউরোপীয় ঔষধি উদ্ভিদের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা আছে। 
তাঁর সম্মানে Seguieria গণটির নামকরণ করা হয়। Seguieria গণের কোনো উদ্ভিদ বাঙলায় পাওয়া যায় না। দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় Seguieria macrophylla যার ইংরেজি নাম Red Inkplant বা লালকালি। এছাড়া Ranunculus গণের Ranunculus seguieri (জলধনিয়া’র একটি প্রজাতি, বাঙলায় নেই) এবং Euphorbia seguieriana (দুধিয়া’র একটি প্রজাতি, বাঙলায় নেই)-এর প্রজাতির নাম দেয়া হয়েছে তাঁর নামে। 
ল্যাটিন Nymph ও Oides শব্দ যুক্ত হয়ে Nymphoides শব্দটা তৈরি হয়েছে। এর অর্থ নিম্ফের মতো। গ্রীক ও রোমান পুরাণ অনুসারে সমুদ্র, বন ও পর্বতসংলগ্ন জলধারায় অধিষ্ঠানকারী কুমারী উপদেবী বা পরীদের নিম্ফ বলা হয়। প্রকৃতিকে জীবন্ত করে দেয়ার দায়িত্ব নিম্ফদের এবং তারা গাইতে ও নাচতে পছন্দ করে। জলের উপর যারা প্রকৃতই দুলে দুলে নাচে তারা Nymphaea গণের অন্তর্ভূক্ত। এ নাম দিয়েছেন কার্ল ভন লিনিয়াস। যেমন শাপলা। কিন্তু যারা পুরোপুরি Nymphaea না, কিন্তু নিমফিয়ার মতো, তারা হলো Nymphoides। চাঁদমালা ও তার ভাইবোনেরা তাই নিম্ফোইডেস। 
Nymphoides এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ যা সাধারণত বহুবর্ষজীবী। জলের উপর ভাসমান বা শয়ান অবস্থায় থাকে। মাটিতে শেকড় গাড়ে না বরং এক জায়গা থেকে ভেসে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। এ উদ্ভিদের লম্বা, ভাসমান গোলাকার কাণ্ড থাকে যার গিঁট থেকে মূল বা উপমূল (rootlet) গজাতে পারে। অধিকাংশ সময় পরিবর্ত পত্র (alternate), কদাচিৎ বিপরীত পত্র (opposite) হয়। ভাসমান পত্রফলকে হাতের তালুর মতো কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়ানো পত্রশিরা থাকে। অখণ্ড পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, উপবৃত্তাকার বা গোলাকার। মঞ্জরীদণ্ডের পর্বের উপর গুচ্ছবদ্ধ ফুল সাদা অথবা হলুদ রঙের হয়। চারটি বা পাঁচটি বৃত্যাংশের প্রত্যেকটির মাঝখান থেকে কিছুটা নিচে অনুদৈর্ঘ্য ভাঁজ বর্তমান। চারটি বা পাঁচটি পাপড়িলগ্ন পুংকেশর। এক প্রকোষ্ঠের গর্ভাশয় যার গর্ভমুণ্ড দ্বিখণ্ডিত। চোঙ্গাকৃতি (cylindrical) ফল অর্ধ অবিদারি (indehiscent)। অর্থাৎ বীজ পরিপক্ক হলেও বীজাধার ফেটে যায় না। বীজাধার (capsules) উপবৃত্তাকার, ডিম্বাকার বা গোল। একসঙ্গে অনেকগুলো চাকতি আকৃতির বীজ হয়। কোনো কোনো বীজের পাখনা আছে। 
কিউ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও দ্য প্লান্ট লিস্ট অনুসারে নিম্ফোইডেস গণ-এর মোট ৬১টি উদ্ভিদ আছে যার মধ্যে ৩৪টি গৃহীত (accepted) ও ২৭টি অমীমাংসিত (unresolved)। 
৬১টি প্রজাতির মধ্যে বৃহত্তর বাঙলায় (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) চারটি প্রজাতি পাওয়া যায়। প্রজাতিগুলো হলো : 
  1. Nymphoides aurantiaca (Dalzell) Kuntze
  2. Nymphoides hydrophylla (Lour.) Kuntze
  3. Nymphoides indica (L.) Kuntze ও
  4. Nymphoides parvifolia Kuntze (গৃহীত নাম : Limnanthemum parvifolium Griseb.)

Nymphoides গণ-এর প্রজাতিসমূহ শনাক্তকরণ চিহ্ন : 

১. কাণ্ডে (stem) কোনো শাখা নেই। কাণ্ডের মূল অংশে (stem node) পরিবর্ত পত্র (alternate), অগ্রভাগে (stem apex) বিপরীত পত্র (opposite); ২.৫-৩.০ সেমি লম্বা পাপড়ি বা পুষ্পদল সোনালি হলদে রঙের। বীজাধার ১.৭-২.৫ সেমি লম্বা। চ্যাপ্টা বীজ ৪-৫ মিমি। বীজ ঘন সন্নিবেশিত : Nymphoides peltata (S.G.Gmel.) Kuntze 
২. কাণ্ডে (stem) শাখা আছে। কাণ্ডের মূল অংশে ১-৩টি পাতা; অগ্রভাগে একক পত্র (solitary) : 
২.১ বৃত্যাংশ ৪-৫টি; বীজাধার আয়ত-উপবৃত্তাকার, ২.৫-৫.০ মিমি পুরু; প্রান্ত সামান্য কীলকাকার; বীজ ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে; মসৃণ বীজাধারের গায়ে কোনো দাগ নেই : Ludwigia perennis L. 
২.২ বৃত্যাংশ ৪টি; বীজাধার সরু বেলনাকার, ১-২ মিমি পুরু ও কিছুটা চতুষ্কোণ; বীজের আকার ০.৫-০.৬ মিমি, প্রতি গর্ভ-প্রকোষ্ঠে ১ সারিতে বিন্যস্ত; বীজাধারের গায়ে স্পষ্ট দাগ আছে : Ludwigia prostrata Roxb.