ভুঁইশাক
বৈজ্ঞানিক নাম : Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell
সমনাম : Fissendocarpa linifolia (Vahl) Bennet; Jussiaea fissendocarpa Haines; Jussiaea hyssopifolia G.Don; Jussiaea linifolia Vahl; Jussiaea weddellii Micheli; Ludwigia linifolia (Vahl) R.S.Rao
বাঙলা নাম : পানিলঙ, ভুঁইশাক, গাঙচুমু
ইংরেজি নাম : Seed-box, Hyssop-leaved Water Primrose
অন্যান্য নাম : নীর গ্রাম্পু (মালয়ালাম), বাসলাসিরা (মালয়ালাম)
ব্রিটিশ শ্রেণীকরণবিদ, উদ্ভিদবিদ ও সাংকেতিক ভাষা-বিশারদ আর্থার ওয়ালিস এক্সেল (Arthur Wallis Exell) লুডভিগিয়া হিসপিফোলিয়া নামকরণ করেন। আর্থার এক্সেল ১৯০১ সালের ২১ মে ইংল্যন্ডের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে স্নাতকোত্তর পাস করার আগেই ১৯২৪ সালে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দ্বিতীয় শ্রেণীর সহকারি হিশেবে যোগ দেন। আফ্রিকার উদ্ভিদপ্রজাতি সম্পর্কে জানার জন্য ১৯৩২ সালে তিনি গিনি উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে ১ বছর অভিযান চালান এবং ১৯৪৪ সালে Catalogue of the Vascular Plants of Saint Tome নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
এরই মধ্যে পর্তুগীজ উদ্ভিদবিদ লুইস ক্যারিসো ও ফ্রান্সিসকো মেন্ডোঙ্কার সঙ্গে এক্সেলের বন্ধুত্ব হয়। তাঁদের সহযোগিতায় তিনি ১৯৩৭ সালে অ্যাঙ্গোলার উদ্ভিদ বিষয়ক গ্রন্থ Conspectus Florae Angolensis প্রকাশ করতে সমর্থ হন। পর্তুগীজ, জার্মান, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার এক্সেলকে যুদ্ধকালীন যোগাযোগ দপ্তরে নিয়োগ করে। এ সময় তিনি সাংকেতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
১৯৫০ সালে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের উপসংরক্ষক পদে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি মোজাম্বিকের উদ্ভিদপ্রজাতি বিষয়ে কাজের সুবাদে বহুবার মোজাম্বিক ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সফর করেন। তারই ফলস্বরূপ ১৯৬২ সালে তাঁর Flora Zambesiaca নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ওই বছরই পর্তুগালের কোইমব্রা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এসসি (ডক্টর অব সায়েন্স) ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৬২ সালেই মিউজিয়ামের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এক্সেল কিউ গার্ডেনে খণ্ডকালীন উদ্ভিদবিদ হিশেবে কাজ শুরু করেন।
আর্থার ওয়ালিস এক্সেল ইংল্যান্ডের চেলথেনহ্যামে ১৯৯৩ সালের ১৫ জানুয়ারি মারা যান। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদসমূহের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে Exell শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাঁর সম্মানে আফ্রিকার একটি মাছের গণের নাম Exellia ও গোত্রের নাম Exelliidae দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো উদ্ভিদের প্রজাতির নাম exellii দেয়া হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
স্কটল্যান্ডের উদ্ভিদবিদ জর্জ ডন (George Don) ১৮৩২ সালে উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছিলেন জাসিইয়া হিসপিফোলিয়া। ফরাসি প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিদ বার্নার্ড ডি জাসিই থেকে জাসিইয়া এবং Hyssopifolia মিলে এমন নামকরণ। Hyssop অর্থ জুফা বা ইসপ (Hyssopus officinalis) এবং Folia অর্থ পাতা। অর্থাৎ জুফা গাছের পাতার মতো যে গাছের পাতা তাঁর নাম হিসপিফোলিয়া। ডনের সূত্র অনুসরণ করে আর্থার এক্সেল উদ্ভিদটিকে লুডভিগিয়া হিসপিফোলিয়া বলে ব্যাখ্যা করেন।
জর্জ ডনের পূর্বে অবশ্য ড্যানিশ-নরওয়েজিয়ান উদ্ভিদবিদ, ভেষজবিদ ও প্রাণীবিদ মার্টিন হেনরিকসেন ভাল (Martin Henrichsen Vahl) ১৭৯৮ সালে সর্বপ্রথম উদ্ভিদটিকে শনাক্ত করেছিলেন। তাঁর দেয়া নাম ছিলো Fissendocarpa linifolia। এছাড়া সুইডিশ উদ্ভিদবিদ মার্ক মিশেলি (Marc Micheli), ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ হেনরি হ্যাজেলফুট হেইনেস (Henry Haselfoot Haines), ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ সিগমনি স্টিফেন রিচার্ড বেনেট (Sigamony Stephen Richard Bennet) এবং ভারতীয় উদ্ভিদবিদ রোলা সেশাগিরি রাও (Rolla Seshagiri Rao) এই উদ্ভিদটির ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছিলেন। এঁদের সবগুলো নামই সমনাম হিশেবে স্বীকৃত। তবে সেশাগিরি রাওয়ের প্রদত্ত নামটি এখনও অননুমোদিত অবস্থায় আছে।