Ludwigia (L.)

লুডবিগিয়া (Ludwigia) গণটি ওনাগ্রেসি (Onagraceae) বা কেশরদাম গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। সুইডিশ উদ্ভিদবিদ ও দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus) ১৭৫৩ সালে এই গণটির নামকরণ করেন। জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক খ্রিস্টিয়ান গটলীব লুডবিগ (Christian Gottlieb Ludwig) স্মরণে এই গণটির নামকরণ করা হয়।  
গটলীব লুডবিগ ১৭০৯ সালের ৩০ এপ্রিল বর্তমান পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করতেন। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই গটলীব ১৭৩০ সালে আরেক জার্মান প্রকৃতিবিদ ও চিকিৎসক জোহান এরনেস্ত হেবেনস্ট্রেইটের (Johann Ernst Hebenstreit) আফ্রিকা অভিযানে সহকারির চাকরি নেন। ফিরে এসে ১৭৩৩ সালে তিনি আবারও পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৭৩৬ সাল থেকে লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন। বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ অগাস্টিন ফ্রেডরিক ওয়ালথারের (Augustin Friedrich Walther) অধীনে পরের বছর গটলীব পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ইতোমধ্যে তিনি হেবেনস্ট্রেইটের সঙ্গে উত্তর আমেরিকা অভিযানেও অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাশাস্ত্র, রোগনির্ণয়বিদ্যা ও থেরাপি বিষয়ের পূর্ণ অধ্যাপক পদ অর্জন করেন।  
গটলীব লুডবিগের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে De Vegetatione Plantarum Marinarum (1736), Institvtiones Historico-physicae Regni Vegetabilis (1742) ও Ectypa Vegetabilium (1760–1764)। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদগুলোর বৈজ্ঞানিক নামের শেষে Ludw. লেখা হয়। গটলীব লুডবিগ ১৭৭৩ সালের ৭ মে জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পুত্র খ্রিস্টিয়ান ফ্রেডরিক লুডবিগও (Christian Friedrich Ludwig) একজন বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ।  
লুডবিগিয়া এক ধরনের খাঁড়া, লতানো বা ভাসমান জলজ বীরুৎ (Herb)। এর কয়েকটা প্রজাতির শাখা হলেও অনেকগুলোরই কোনো শাখা-প্রশাখা হয় না। কাণ্ড প্রায়ই লালচে ছোপযুক্ত এবং রোমশ বা রোমহীন হয়। পাতা বিপরীতমূখী বা একান্তর ও উপপত্রহীন। শাখার শীর্ষে একক ফুল হয়। বৃত্যাংশ ৪-৫টি, ত্রিভূজাকার এবং ফুল ফোটার পরও স্থায়ী থাকে। হলদে, সাদা বা দুধসাদা কুঞ্চিত পাপড়ি (দল) ৪-৫টি অথবা অনুপস্থিত। রোমহীন বা রোমযুক্ত ৪-৮টি পুংকেশর হয়। কোনো কোনো সময় পুংকেশরের গোড়ায় রোমশ মধুগ্রন্থি থাকে। গর্ভমুণ্ড গোলাকার ও চার খণ্ডে খণ্ডিত। ডিম্বাশয়ের চারটি প্রকোষ্ঠ আছে। ফল বা বীজাধার বেলনাকার। বীজ বাদামি থেকে ফিকে বাদামি, গোলাকার বা উপবৃত্তাকার।  
লুডবিগিয়া গণের ১৩৩ প্রজাতি (species), নয়টি উপপ্রজাতি (subspecies) ও দুইটি জাত (variety) পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে ৯৫টি বৈজ্ঞানিক নাম গৃহীত এবং ৩৮টি অমীমাংসিত অবস্থায় আছে। 
বৃহত্তর বাঙলায় লুডবিগিয়া গণের ছয়টি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এগুলো হলো :
  1. Ludwigia adscendens (L.) H.Hara 
  2. Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell 
  3. Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H. Raven
  4. Ludwigia perennis L. 
  5. Ludwigia prostrata Roxb. ও 
  6. Ludwigia repens J.R. Forst

লু্ডভিগিয়া গণ (Genus)-এর প্রজাতিসমূহ শনাক্তকরণ চিহ্ন :  

১. ফুলের বৃত্যাংশ (Sepal) ৫-১২ মিমি; পাপড়ি (দল বা petal) ৬-১৮ মিমি  
১.১ ফুলের বৃত্যাংশ ৪টি; কাণ্ড ভীষণ রোমশ (villous-hairy) অথবা কদাচিৎ লম্বা লোমাবৃত (puberulous); পুষ্পবৃন্ত (pedicel) ১-১০ মিমি; মুক্তবীজ; বীজের গায়ে গভীর ও খাঁড়া দাগ (raphe); পুংকেশর ৮টি; চারটি পরাগরেণু (pollen) একত্রে যূথবদ্ধ (tetrad) : Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H.Raven 
১.২ ফুলের বৃত্যাংশ ৫টি; কিছুটা অমসৃণ বা খসখসে (subglabrous) অথবা কদাচিৎ রোমশ (villous-hairy); পুষ্পবৃন্ত (pedicel) ১৬-৬৫ মিমি; ফলের অন্তত্বকের (endocarp) সঙ্গে বীজ লাগানো; বীজের গায়ের দাগ অস্পষ্ট (inconspicuous); প্রতিটি পরাগরেণু বিচ্ছিন্ন (monad) :  
১.২.১ পুষ্পদলের রঙ হলদের উপর মাখনরঙা সাদা (creamy-white); গাছের ভাসমান শাখার প্রত্যেক পর্ব বা গিঁটে (node) সুতা কাটার টাকুর মতো (spindle-shaped) গুচ্ছাকার সোজা বায়ুমূল বা শ্বাসমূল (pneumatophores) বিদ্যমান : Ludwigia adscendens (L.) H.Hara
১.২.২ সম্পূর্ণ পুষ্পদলের রঙ হলুদ; গাছের ভাসমান শাখায় সাধারণভাবে কোনো বায়ুমূল নেই। যদি বায়ুমূল থাকে তবে তা লম্বা এবং ডুবন্ত কাণ্ডের (submerged stem) সঙ্গে যুক্ত :  
১.২.২.১ পুষ্পদলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ; ফল ১০-৪০ মিমি; বীজাধার (capsule) ফলনশীল (fertile) : Ludwigia peploides (Kunth) P.H.Raven | বাঙলায় অনুপস্থিত  
১.২.২.২ পুষ্পদলের রঙ হালকা হলুদ; ফল বন্ধ্যা (sterile) ও শাঁসহীন (abortive) : Ludwigia × taiwanensis C.I Peng (1990) | বাঙলায় অনুপস্থিত  
২. বৃত্যাংশ (Sepal) ১ - ৪.৫ মিমি; পাপড়ি (দল বা petal) ১ - ৩ মিমি অথবা অনুপস্থিত : 
২.১ গাছ ভূশায়ী (prostrate) অথবা কদাচিৎ উর্ধ্বমূখী (ascending); কাণ্ড ২০-৪৫ সেমি; প্রত্যেক পর্বে বা গিঁটে শেকড় হয়; ফুলের কোনো পাপড়ি (দল) নেই; বীজাধার ৩-৫ মিমি লম্বা উপবৃত্তাকার (elongate-globose); ত্রিকোণ বীজে খাঁড়া দাগ আছে : Ludwigia ovalis Miq. | বাঙলায় অনুপস্থিত 
২.২ প্রাথমিকভাবে খাঁড়া গাছ, শুধু গোড়ায়ই শেকড় আছে; ১০-৩০০ সেমি লম্বা কাণ্ড; ফুলের হলুদ রঙের পাপড়ি (দল) আছে; বীজাধার ১০-৩০ মিমি লম্বা, বেলনাকার (cylindric) অথবা আয়ত-উপবৃত্তাকার (oblanceoloid); বীজের গায়ে দাগ অস্পষ্ট :  
২.২.১ পুংকেশরের (stamen) পরিমাণ বৃত্যাংশের সংখ্যার দ্বিগুণ; ওপরের দিকের বীজাধারের বাইরে বীজ বেরিয়ে থাকে; বীজের আকার ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে (locule) দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে। নিচের দিকের বীজাধারের অন্তত্বকে বীজ লাগানো থাকে; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে এক সারি বীজ থাকে; বীজের আকার ০.৭-০.৯ মিমি : Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell
২.২.২ পুংকেশরের পরিমাণ বৃত্যাংশের সংখ্যার সমান, কদাচিৎ ১-২টি বেশি হতে পারে। সব বীজই বীজাধার থেকে মুক্ত অথবা ফলের সঙ্গে লাগানো; যেভাবেই থাকুক না কেন একটি প্রজাতিতে বীজের আকার বা ধরনে কোনো ভিন্নতা হয় না :  
২.২.২.১ বীজের আকার ০.৮-১.৪ মিমি; বীজাধারের অন্তত্বকের সঙ্গে বীজ লাগানো; প্রতিটি পরাগরেণু বিচ্ছিন্ন (monad) : Ludwigia epilobioides Maxim. | বাঙলায় অনুপস্থিত  
২.২.২.২ বীজের আকার ০.৩-০.৬ মিমি; বীজাধার থেকে বীজ থেকে মুক্ত; ফলের অন্তত্বকের সঙ্গে বীজ লাগানো নয়। চারটি পরাগরেণু একত্রে যূথবদ্ধ : 
২.২.২.২.১ বৃত্যাংশ ৪-৫টি; বীজাধার আয়ত-উপবৃত্তাকার, ২.৫-৫.০ মিমি পুরু; প্রান্ত সামান্য কীলকাকার; বীজ ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে; মসৃণ বীজাধারের গায়ে কোনো দাগ নেই : Ludwigia perennis L. | বাঙলা নাম : অমরকুড়া, জললবঙ্গ, বনলবঙ্গ 
২.২.২.২.২ বৃত্যাংশ ৪টি; বীজাধার সরু বেলনাকার, ১-২ মিমি পুরু ও কিছুটা চতুষ্কোণ; বীজের আকার ০.৫-০.৬ মিমি, প্রতি গর্ভ-প্রকোষ্ঠে ১ সারিতে বিন্যস্ত; বীজাধারের গায়ে স্পষ্ট দাগ আছে : Ludwigia prostrata Roxb. | বাঙলা নাম : হারিং রঙ্গাইনি