Nymphoides (Ség.)

Nymphoides গণটি Menyanthaceae বা চাঁদমালা গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ, অক্ষরবিদ, জ্যোতির্বিদ ও উদ্ভিদবিদ জ্যঁ ফ্রাঙ্কো সেগুয়ের (Jean-François Séguier) ১৭৫৪ সালে Nymphoides গণের নামকরণ করেন। Menyanthaceae গোত্রের ৮টি গণ থাকলেও শুধুমাত্র Nymphoides গণের উদ্ভিদ বাঙলাদেশে পাওয়া যায়। 
জ্যঁ ফ্রাঙ্কো সেগুয়ের ১৭০৩ সালের ২৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ এবং ১৭৮৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপেলার শহরে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার সময়ই তিনি উদ্ভিদবিদ্যার প্রেমে পড়ে যান। বন্ধু, ইতালীয় লেখক ও নাট্যকার এবং সহকর্মী স্কিপিও মাফেই ও সেগুয়ের ১৭৩২ থেকে ১৭৩৬ পর্যন্ত চার বছর ধরে পুরো ইউরোপের এমাথা ওমাথা চষে বেড়ান শুধু উদ্ভিদ বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। ১৭৫৫ সালে তিনি আকাদেমি দ্য নিমে (Académie de Nîmes)-এর সদস্য মনোনীত হন এবং ১৭৬৫-১৭৮৪ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৭২ সালে তিনি ফরাসি মানবিক বিজ্ঞান একাডেমি’র (Académie des Inscriptions et Belles-Lettres) সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭৪৫-৫৪ সাল পর্যন্ত নয় বছর ধরে তিনি তিন খণ্ডের Plantae Veronenses নামে ইতালির ভেরোনা অঞ্চলের উদ্ভিদের পরিচিতি বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া ১৭৪০ সালে Bibliotheca botanica নামে ইউরোপীয় ঔষধি উদ্ভিদের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা আছে। 
তাঁর সম্মানে Seguieria গণটির নামকরণ করা হয়। Seguieria গণের কোনো উদ্ভিদ বাঙলায় পাওয়া যায় না। দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় Seguieria macrophylla যার ইংরেজি নাম Red Inkplant বা লালকালি। এছাড়া Ranunculus গণের Ranunculus seguieri (জলধনিয়া’র একটি প্রজাতি, বাঙলায় নেই) এবং Euphorbia seguieriana (দুধিয়া’র একটি প্রজাতি, বাঙলায় নেই)-এর প্রজাতির নাম দেয়া হয়েছে তাঁর নামে। 
ল্যাটিন Nymph ও Oides শব্দ যুক্ত হয়ে Nymphoides শব্দটা তৈরি হয়েছে। এর অর্থ নিম্ফের মতো। গ্রীক ও রোমান পুরাণ অনুসারে সমুদ্র, বন ও পর্বতসংলগ্ন জলধারায় অধিষ্ঠানকারী কুমারী উপদেবী বা পরীদের নিম্ফ বলা হয়। প্রকৃতিকে জীবন্ত করে দেয়ার দায়িত্ব নিম্ফদের এবং তারা গাইতে ও নাচতে পছন্দ করে। জলের উপর যারা প্রকৃতই দুলে দুলে নাচে তারা Nymphaea গণের অন্তর্ভূক্ত। এ নাম দিয়েছেন কার্ল ভন লিনিয়াস। যেমন শাপলা। কিন্তু যারা পুরোপুরি Nymphaea না, কিন্তু নিমফিয়ার মতো, তারা হলো Nymphoides। চাঁদমালা ও তার ভাইবোনেরা তাই নিম্ফোইডেস। 
Nymphoides এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ যা সাধারণত বহুবর্ষজীবী। জলের উপর ভাসমান বা শয়ান অবস্থায় থাকে। মাটিতে শেকড় গাড়ে না বরং এক জায়গা থেকে ভেসে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। এ উদ্ভিদের লম্বা, ভাসমান গোলাকার কাণ্ড থাকে যার গিঁট থেকে মূল বা উপমূল (rootlet) গজাতে পারে। অধিকাংশ সময় পরিবর্ত পত্র (alternate), কদাচিৎ বিপরীত পত্র (opposite) হয়। ভাসমান পত্রফলকে হাতের তালুর মতো কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়ানো পত্রশিরা থাকে। অখণ্ড পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, উপবৃত্তাকার বা গোলাকার। মঞ্জরীদণ্ডের পর্বের উপর গুচ্ছবদ্ধ ফুল সাদা অথবা হলুদ রঙের হয়। চারটি বা পাঁচটি বৃত্যাংশের প্রত্যেকটির মাঝখান থেকে কিছুটা নিচে অনুদৈর্ঘ্য ভাঁজ বর্তমান। চারটি বা পাঁচটি পাপড়িলগ্ন পুংকেশর। এক প্রকোষ্ঠের গর্ভাশয় যার গর্ভমুণ্ড দ্বিখণ্ডিত। চোঙ্গাকৃতি (cylindrical) ফল অর্ধ অবিদারি (indehiscent)। অর্থাৎ বীজ পরিপক্ক হলেও বীজাধার ফেটে যায় না। বীজাধার (capsules) উপবৃত্তাকার, ডিম্বাকার বা গোল। একসঙ্গে অনেকগুলো চাকতি আকৃতির বীজ হয়। কোনো কোনো বীজের পাখনা আছে। 
কিউ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও দ্য প্লান্ট লিস্ট অনুসারে নিম্ফোইডেস গণ-এর মোট ৬১টি উদ্ভিদ আছে যার মধ্যে ৩৪টি গৃহীত (accepted) ও ২৭টি অমীমাংসিত (unresolved)। 
৬১টি প্রজাতির মধ্যে বৃহত্তর বাঙলায় (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) চারটি প্রজাতি পাওয়া যায়। প্রজাতিগুলো হলো : 
  1. Nymphoides aurantiaca (Dalzell) Kuntze
  2. Nymphoides hydrophylla (Lour.) Kuntze
  3. Nymphoides indica (L.) Kuntze ও
  4. Nymphoides parvifolia Kuntze (গৃহীত নাম : Limnanthemum parvifolium Griseb.)

Nymphoides গণ-এর প্রজাতিসমূহ শনাক্তকরণ চিহ্ন : 

১. কাণ্ডে (stem) কোনো শাখা নেই। কাণ্ডের মূল অংশে (stem node) পরিবর্ত পত্র (alternate), অগ্রভাগে (stem apex) বিপরীত পত্র (opposite); ২.৫-৩.০ সেমি লম্বা পাপড়ি বা পুষ্পদল সোনালি হলদে রঙের। বীজাধার ১.৭-২.৫ সেমি লম্বা। চ্যাপ্টা বীজ ৪-৫ মিমি। বীজ ঘন সন্নিবেশিত : Nymphoides peltata (S.G.Gmel.) Kuntze 
২. কাণ্ডে (stem) শাখা আছে। কাণ্ডের মূল অংশে ১-৩টি পাতা; অগ্রভাগে একক পত্র (solitary) : 
২.১ বৃত্যাংশ ৪-৫টি; বীজাধার আয়ত-উপবৃত্তাকার, ২.৫-৫.০ মিমি পুরু; প্রান্ত সামান্য কীলকাকার; বীজ ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে; মসৃণ বীজাধারের গায়ে কোনো দাগ নেই : Ludwigia perennis L. 
২.২ বৃত্যাংশ ৪টি; বীজাধার সরু বেলনাকার, ১-২ মিমি পুরু ও কিছুটা চতুষ্কোণ; বীজের আকার ০.৫-০.৬ মিমি, প্রতি গর্ভ-প্রকোষ্ঠে ১ সারিতে বিন্যস্ত; বীজাধারের গায়ে স্পষ্ট দাগ আছে : Ludwigia prostrata Roxb.

Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H. Raven

লাল বনলঙ্গা

বৈজ্ঞানিক নাম : Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H. Raven 
সমনাম : Epilobium fruticosum Lour.; Jussiaea octovalvis (Jacq.) Sw.; Jussiaea pubescens L.; Jussiaea suffruticosa L.; Ludwigia angustifolia (Lam.) M. Gómez; Ludwigia pubescens (L.) H. Hara; Ludwigia suffruticosa (L.) M.Gómez; Oenothera octovalvis Jacq. 
বাঙলা নাম : লাল বনলঙ্গা, লাল বনলবঙ্গ, ভুঁইকুমড়া 
ইংরেজি নাম : Mexican Primrose-Willow, Mexican Seedbox, Willow Primrose, Shrubby Ludwigia 
অন্যান্য নাম : বন ঝলকিয়া (আসাম), লুডভিগিয়ে আ ফ্লেয়্যুর সিসিলিস (ফরাসি), কাট্টুগ্রাম্ব (মালায়লাম), বনলং (হিন্দি), কাউকাকুলা (কানাড়া); পান লবঙ্গ (মারাঠি), ভূ লবঙ্গ (সংস্কৃত), কাট্টু কিরাম্পু (তামিল), নীরুবাক্কল (তেলেগু)

Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell

ভুঁইশাক


বৈজ্ঞানিক নাম : Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell
সমনাম : Fissendocarpa linifolia (Vahl) Bennet; Jussiaea fissendocarpa Haines; Jussiaea hyssopifolia G.Don; Jussiaea linifolia Vahl; Jussiaea weddellii Micheli; Ludwigia linifolia (Vahl) R.S.Rao 
বাঙলা নাম : পানিলঙ, ভুঁইশাক, গাঙচুমু 
ইংরেজি নাম : Seed-box, Hyssop-leaved Water Primrose 
অন্যান্য নাম : নীর গ্রাম্পু (মালয়ালাম), বাসলাসিরা (মালয়ালাম) 
ব্রিটিশ শ্রেণীকরণবিদ, উদ্ভিদবিদ ও সাংকেতিক ভাষা-বিশারদ আর্থার ওয়ালিস এক্সেল (Arthur Wallis Exell) লুডভিগিয়া হিসপিফোলিয়া নামকরণ করেন। আর্থার এক্সেল ১৯০১ সালের ২১ মে ইংল্যন্ডের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে স্নাতকোত্তর পাস করার আগেই ১৯২৪ সালে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দ্বিতীয় শ্রেণীর সহকারি হিশেবে যোগ দেন। আফ্রিকার উদ্ভিদপ্রজাতি সম্পর্কে জানার জন্য ১৯৩২ সালে তিনি গিনি উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে ১ বছর অভিযান চালান এবং ১৯৪৪ সালে Catalogue of the Vascular Plants of Saint Tome নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। 
এরই মধ্যে পর্তুগীজ উদ্ভিদবিদ লুইস ক্যারিসো ও ফ্রান্সিসকো মেন্ডোঙ্কার সঙ্গে এক্সেলের বন্ধুত্ব হয়। তাঁদের সহযোগিতায় তিনি ১৯৩৭ সালে অ্যাঙ্গোলার উদ্ভিদ বিষয়ক গ্রন্থ Conspectus Florae Angolensis প্রকাশ করতে সমর্থ হন। পর্তুগীজ, জার্মান, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার এক্সেলকে যুদ্ধকালীন যোগাযোগ দপ্তরে নিয়োগ করে। এ সময় তিনি সাংকেতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। 
১৯৫০ সালে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের উপসংরক্ষক পদে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি মোজাম্বিকের উদ্ভিদপ্রজাতি বিষয়ে কাজের সুবাদে বহুবার মোজাম্বিক ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সফর করেন। তারই ফলস্বরূপ ১৯৬২ সালে তাঁর Flora Zambesiaca নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ওই বছরই পর্তুগালের কোইমব্রা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এসসি (ডক্টর অব সায়েন্স) ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৬২ সালেই মিউজিয়ামের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এক্সেল কিউ গার্ডেনে খণ্ডকালীন উদ্ভিদবিদ হিশেবে কাজ শুরু করেন। 
আর্থার ওয়ালিস এক্সেল ইংল্যান্ডের চেলথেনহ্যামে ১৯৯৩ সালের ১৫ জানুয়ারি মারা যান। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদসমূহের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে Exell শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাঁর সম্মানে আফ্রিকার একটি মাছের গণের নাম Exellia ও গোত্রের নাম Exelliidae দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো উদ্ভিদের প্রজাতির নাম exellii দেয়া হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। 
স্কটল্যান্ডের উদ্ভিদবিদ জর্জ ডন (George Don) ১৮৩২ সালে উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছিলেন জাসিইয়া হিসপিফোলিয়া। ফরাসি প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিদ বার্নার্ড ডি জাসিই থেকে জাসিইয়া এবং Hyssopifolia মিলে এমন নামকরণ। Hyssop অর্থ জুফা বা ইসপ (Hyssopus officinalis) এবং Folia অর্থ পাতা। অর্থাৎ জুফা গাছের পাতার মতো যে গাছের পাতা তাঁর নাম হিসপিফোলিয়া। ডনের সূত্র অনুসরণ করে আর্থার এক্সেল উদ্ভিদটিকে লুডভিগিয়া হিসপিফোলিয়া বলে ব্যাখ্যা করেন। 
জর্জ ডনের পূর্বে অবশ্য ড্যানিশ-নরওয়েজিয়ান উদ্ভিদবিদ, ভেষজবিদ ও প্রাণীবিদ মার্টিন হেনরিকসেন ভাল (Martin Henrichsen Vahl) ১৭৯৮ সালে সর্বপ্রথম উদ্ভিদটিকে শনাক্ত করেছিলেন। তাঁর দেয়া নাম ছিলো Fissendocarpa linifolia। এছাড়া সুইডিশ উদ্ভিদবিদ মার্ক মিশেলি (Marc Micheli), ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ হেনরি হ্যাজেলফুট হেইনেস (Henry Haselfoot Haines), ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ সিগমনি স্টিফেন রিচার্ড বেনেট (Sigamony Stephen Richard Bennet) এবং ভারতীয় উদ্ভিদবিদ রোলা সেশাগিরি রাও (Rolla Seshagiri Rao) এই উদ্ভিদটির ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছিলেন। এঁদের সবগুলো নামই সমনাম হিশেবে স্বীকৃত। তবে সেশাগিরি রাওয়ের প্রদত্ত নামটি এখনও অননুমোদিত অবস্থায় আছে।

Onagraceae (Juss.)

  1. Ludwigia L.

Ludwigia adscendens (L.) H.Hara

কেশরদাম


বৈজ্ঞানিক নাম : Ludwigia adscendens (L.) H.Hara 
সমনাম : Jussiaea adscendens L.; Jussiaea repens L. 
বাংলা নাম : কেশরদাম, ক্যাসলা, মালচা, মুলসি 
ইংরেজি নাম : Water Primrose, Water Dragon, Marshy Jasmine 
অন্যান্য নাম : পানি খুটোরা (আসাম); নীরুহাভু (কানাড়া); নীরুদন্তু (কানাড়া); কেসর (হিন্দি); নীর চরম্বু (মালয়ালাম); ইসিং কুন্দো (মণিপুরী); জাডেলো (নেপালি); নীরু বাছালি (তেলেগু); নীরু থিগালু (তেলেগু); লুডভিগিয়া গ্রান্ডেস (ফরাসি)
উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus) ১৭৬৭ সালে তাঁর Mantissa Plantarum গ্রন্থে উদ্ভিদটিকে Jussiaea adscendens নামে শনাক্ত করেন। ফরাসি প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিদ বার্নার্ড ডি জাসিইউ (Bernard de Jussieu)-এর প্রতি সম্মান জানিয়ে গণটির নাম জাসিইয়া করা হয়। 
বার্নার্ড জাসিইউ ১৬৯৯ সালের ১৭ আগস্ট পূর্ব ফ্রান্সের লিয়ন শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপিলার থেকে চিকিৎসাবিদ্যা পড়া শেষ করে ১৭২০ সালে চিকিৎসক পেশায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর ভাই অ্যান্টনি ডি জাসিইউ (Antoine de Jussieu) ছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও প্যারিস উদ্ভিদ উদ্যানের কর্মকর্তা। পেশা জমজমাট না হওয়ায় ভাইয়ের আমন্ত্রণে বার্নার্ড ১৭২২ সালে প্যারিসে যান এবং উদ্ভিদবিদ সেবাস্টিন ভ্যাইল্যান্টের (Sébastien Vaillant)-এর উত্তরসূরি হিশেবে প্যারিস উদ্ভিদ-উদ্যানের প্রদর্শক পদে যোগদান করেন। 
উদ্ভিদ-উদ্যানের চাকরিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফরাসি উদ্ভিদবিদ জোসেফ পিটন লিখিত (Joseph Pitton de Tournefort) প্যারিস অঞ্চলের উদ্ভিদের ইতিহাস (Histoire des plantes qui naissent aux environs de Paris) অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি উদ্ভিদ সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তী কয়েক বছরে ফ্রেন্স অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে উদ্ভিদ বিষয়ক একাধিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। উদ্ভিদের বিবর্তন বিষয়ে নিজ তত্ত্ব প্রমাণ করার জন্য তিনি তিনবার নর্ম্যান্ডি উপকূলে অভিযান চালান। এছাড়া বড়ো ভাই অ্যান্টনিকে সঙ্গে নিয়ে স্পেন, পর্তুগাল ও দক্ষিণ ফ্রান্সে গবেষণা করেন। 
বার্নার্ড তাঁর আবিস্কারের স্বীকৃতির বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দিতেন না। তাই তাঁর তত্ত্বগুলোর প্রয়োগ দেখা যায় ভ্রাতুস্পুত্র অ্যান্টনি লরেন্ট ডি জাসিইউ (Antoine Laurent de Jussieu)-এর Genera plantarum বইতে। বার্নার্ড ডি জাসিইউ ১৭৭৭ সালে প্যারিসে মারা যান। তাঁর নামকরণকৃত উদ্ভিদের নামের শেষে B.Juss. যুক্ত করা হয়। 
কার্ল লিনিয়াসের নামকরণ অনুসরণ করে জাপানি উদ্ভিদবিদ হিরোশি হারা (Hiroshi Hara) ১৯৫৩ সালে তাঁর Ludwigia Versus Jussiaea গ্রন্থে Jussiaea গণের ২৯টি প্রজাতি Ludwigia গণের আওতাভূক্ত করেন। হিরোশি হারা ১৯১১ সালের ৫ জানুয়ারি জাপানের টোকিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেন। হিরোশি ১৯৮৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর টোকিওতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদের নামের শেষে H.Hara লেখা হয়।
পরিবর্তিত গণ লুডভিগিয়া নামটিও কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক প্রদত্ত। 
লিনিয়াসের কাছ থেকে হিরোশি হারা প্রজাতির নাম adscendens গ্রহণ করেন। adscendens শব্দটির অর্থ শায়িত অবস্থা থেকে উপরের দিকে উত্থান। যে লতা, বীরুৎ বা গুল্ম প্রধানত ভূশায়ী অবস্থায় থাকে এবং অগ্রভাগ উপরের দিকে বেয়ে উঠতে চায় সেগুলোকে adscendens বলা হয়। জলের উপর কেশরদামের ডগা উর্ধ্বমূখী হয়ে থাকে বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে।

Ludwigia (L.)

লুডবিগিয়া (Ludwigia) গণটি ওনাগ্রেসি (Onagraceae) বা কেশরদাম গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। সুইডিশ উদ্ভিদবিদ ও দ্বিপদী নামের জনক কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus) ১৭৫৩ সালে এই গণটির নামকরণ করেন। জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক খ্রিস্টিয়ান গটলীব লুডবিগ (Christian Gottlieb Ludwig) স্মরণে এই গণটির নামকরণ করা হয়।  
গটলীব লুডবিগ ১৭০৯ সালের ৩০ এপ্রিল বর্তমান পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করতেন। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই গটলীব ১৭৩০ সালে আরেক জার্মান প্রকৃতিবিদ ও চিকিৎসক জোহান এরনেস্ত হেবেনস্ট্রেইটের (Johann Ernst Hebenstreit) আফ্রিকা অভিযানে সহকারির চাকরি নেন। ফিরে এসে ১৭৩৩ সালে তিনি আবারও পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৭৩৬ সাল থেকে লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন। বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ অগাস্টিন ফ্রেডরিক ওয়ালথারের (Augustin Friedrich Walther) অধীনে পরের বছর গটলীব পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ইতোমধ্যে তিনি হেবেনস্ট্রেইটের সঙ্গে উত্তর আমেরিকা অভিযানেও অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাশাস্ত্র, রোগনির্ণয়বিদ্যা ও থেরাপি বিষয়ের পূর্ণ অধ্যাপক পদ অর্জন করেন।  
গটলীব লুডবিগের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে De Vegetatione Plantarum Marinarum (1736), Institvtiones Historico-physicae Regni Vegetabilis (1742) ও Ectypa Vegetabilium (1760–1764)। তাঁর শনাক্তকৃত উদ্ভিদগুলোর বৈজ্ঞানিক নামের শেষে Ludw. লেখা হয়। গটলীব লুডবিগ ১৭৭৩ সালের ৭ মে জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পুত্র খ্রিস্টিয়ান ফ্রেডরিক লুডবিগও (Christian Friedrich Ludwig) একজন বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ।  
লুডবিগিয়া এক ধরনের খাঁড়া, লতানো বা ভাসমান জলজ বীরুৎ (Herb)। এর কয়েকটা প্রজাতির শাখা হলেও অনেকগুলোরই কোনো শাখা-প্রশাখা হয় না। কাণ্ড প্রায়ই লালচে ছোপযুক্ত এবং রোমশ বা রোমহীন হয়। পাতা বিপরীতমূখী বা একান্তর ও উপপত্রহীন। শাখার শীর্ষে একক ফুল হয়। বৃত্যাংশ ৪-৫টি, ত্রিভূজাকার এবং ফুল ফোটার পরও স্থায়ী থাকে। হলদে, সাদা বা দুধসাদা কুঞ্চিত পাপড়ি (দল) ৪-৫টি অথবা অনুপস্থিত। রোমহীন বা রোমযুক্ত ৪-৮টি পুংকেশর হয়। কোনো কোনো সময় পুংকেশরের গোড়ায় রোমশ মধুগ্রন্থি থাকে। গর্ভমুণ্ড গোলাকার ও চার খণ্ডে খণ্ডিত। ডিম্বাশয়ের চারটি প্রকোষ্ঠ আছে। ফল বা বীজাধার বেলনাকার। বীজ বাদামি থেকে ফিকে বাদামি, গোলাকার বা উপবৃত্তাকার।  
লুডবিগিয়া গণের ১৩৩ প্রজাতি (species), নয়টি উপপ্রজাতি (subspecies) ও দুইটি জাত (variety) পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে ৯৫টি বৈজ্ঞানিক নাম গৃহীত এবং ৩৮টি অমীমাংসিত অবস্থায় আছে। 
বৃহত্তর বাঙলায় লুডবিগিয়া গণের ছয়টি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এগুলো হলো :
  1. Ludwigia adscendens (L.) H.Hara 
  2. Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell 
  3. Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H. Raven
  4. Ludwigia perennis L. 
  5. Ludwigia prostrata Roxb. ও 
  6. Ludwigia repens J.R. Forst

লু্ডভিগিয়া গণ (Genus)-এর প্রজাতিসমূহ শনাক্তকরণ চিহ্ন :  

১. ফুলের বৃত্যাংশ (Sepal) ৫-১২ মিমি; পাপড়ি (দল বা petal) ৬-১৮ মিমি  
১.১ ফুলের বৃত্যাংশ ৪টি; কাণ্ড ভীষণ রোমশ (villous-hairy) অথবা কদাচিৎ লম্বা লোমাবৃত (puberulous); পুষ্পবৃন্ত (pedicel) ১-১০ মিমি; মুক্তবীজ; বীজের গায়ে গভীর ও খাঁড়া দাগ (raphe); পুংকেশর ৮টি; চারটি পরাগরেণু (pollen) একত্রে যূথবদ্ধ (tetrad) : Ludwigia octovalvis (Jacq.) P.H.Raven 
১.২ ফুলের বৃত্যাংশ ৫টি; কিছুটা অমসৃণ বা খসখসে (subglabrous) অথবা কদাচিৎ রোমশ (villous-hairy); পুষ্পবৃন্ত (pedicel) ১৬-৬৫ মিমি; ফলের অন্তত্বকের (endocarp) সঙ্গে বীজ লাগানো; বীজের গায়ের দাগ অস্পষ্ট (inconspicuous); প্রতিটি পরাগরেণু বিচ্ছিন্ন (monad) :  
১.২.১ পুষ্পদলের রঙ হলদের উপর মাখনরঙা সাদা (creamy-white); গাছের ভাসমান শাখার প্রত্যেক পর্ব বা গিঁটে (node) সুতা কাটার টাকুর মতো (spindle-shaped) গুচ্ছাকার সোজা বায়ুমূল বা শ্বাসমূল (pneumatophores) বিদ্যমান : Ludwigia adscendens (L.) H.Hara
১.২.২ সম্পূর্ণ পুষ্পদলের রঙ হলুদ; গাছের ভাসমান শাখায় সাধারণভাবে কোনো বায়ুমূল নেই। যদি বায়ুমূল থাকে তবে তা লম্বা এবং ডুবন্ত কাণ্ডের (submerged stem) সঙ্গে যুক্ত :  
১.২.২.১ পুষ্পদলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ; ফল ১০-৪০ মিমি; বীজাধার (capsule) ফলনশীল (fertile) : Ludwigia peploides (Kunth) P.H.Raven | বাঙলায় অনুপস্থিত  
১.২.২.২ পুষ্পদলের রঙ হালকা হলুদ; ফল বন্ধ্যা (sterile) ও শাঁসহীন (abortive) : Ludwigia × taiwanensis C.I Peng (1990) | বাঙলায় অনুপস্থিত  
২. বৃত্যাংশ (Sepal) ১ - ৪.৫ মিমি; পাপড়ি (দল বা petal) ১ - ৩ মিমি অথবা অনুপস্থিত : 
২.১ গাছ ভূশায়ী (prostrate) অথবা কদাচিৎ উর্ধ্বমূখী (ascending); কাণ্ড ২০-৪৫ সেমি; প্রত্যেক পর্বে বা গিঁটে শেকড় হয়; ফুলের কোনো পাপড়ি (দল) নেই; বীজাধার ৩-৫ মিমি লম্বা উপবৃত্তাকার (elongate-globose); ত্রিকোণ বীজে খাঁড়া দাগ আছে : Ludwigia ovalis Miq. | বাঙলায় অনুপস্থিত 
২.২ প্রাথমিকভাবে খাঁড়া গাছ, শুধু গোড়ায়ই শেকড় আছে; ১০-৩০০ সেমি লম্বা কাণ্ড; ফুলের হলুদ রঙের পাপড়ি (দল) আছে; বীজাধার ১০-৩০ মিমি লম্বা, বেলনাকার (cylindric) অথবা আয়ত-উপবৃত্তাকার (oblanceoloid); বীজের গায়ে দাগ অস্পষ্ট :  
২.২.১ পুংকেশরের (stamen) পরিমাণ বৃত্যাংশের সংখ্যার দ্বিগুণ; ওপরের দিকের বীজাধারের বাইরে বীজ বেরিয়ে থাকে; বীজের আকার ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে (locule) দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে। নিচের দিকের বীজাধারের অন্তত্বকে বীজ লাগানো থাকে; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে এক সারি বীজ থাকে; বীজের আকার ০.৭-০.৯ মিমি : Ludwigia hyssopifolia (G.Don) Exell
২.২.২ পুংকেশরের পরিমাণ বৃত্যাংশের সংখ্যার সমান, কদাচিৎ ১-২টি বেশি হতে পারে। সব বীজই বীজাধার থেকে মুক্ত অথবা ফলের সঙ্গে লাগানো; যেভাবেই থাকুক না কেন একটি প্রজাতিতে বীজের আকার বা ধরনে কোনো ভিন্নতা হয় না :  
২.২.২.১ বীজের আকার ০.৮-১.৪ মিমি; বীজাধারের অন্তত্বকের সঙ্গে বীজ লাগানো; প্রতিটি পরাগরেণু বিচ্ছিন্ন (monad) : Ludwigia epilobioides Maxim. | বাঙলায় অনুপস্থিত  
২.২.২.২ বীজের আকার ০.৩-০.৬ মিমি; বীজাধার থেকে বীজ থেকে মুক্ত; ফলের অন্তত্বকের সঙ্গে বীজ লাগানো নয়। চারটি পরাগরেণু একত্রে যূথবদ্ধ : 
২.২.২.২.১ বৃত্যাংশ ৪-৫টি; বীজাধার আয়ত-উপবৃত্তাকার, ২.৫-৫.০ মিমি পুরু; প্রান্ত সামান্য কীলকাকার; বীজ ০.৩-০.৫ মিমি; প্রত্যেক গর্ভ-প্রকোষ্ঠে দুইয়ের বেশি সারিতে বীজ থাকে; মসৃণ বীজাধারের গায়ে কোনো দাগ নেই : Ludwigia perennis L. | বাঙলা নাম : অমরকুড়া, জললবঙ্গ, বনলবঙ্গ 
২.২.২.২.২ বৃত্যাংশ ৪টি; বীজাধার সরু বেলনাকার, ১-২ মিমি পুরু ও কিছুটা চতুষ্কোণ; বীজের আকার ০.৫-০.৬ মিমি, প্রতি গর্ভ-প্রকোষ্ঠে ১ সারিতে বিন্যস্ত; বীজাধারের গায়ে স্পষ্ট দাগ আছে : Ludwigia prostrata Roxb. | বাঙলা নাম : হারিং রঙ্গাইনি